London ১২ই এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে চৈত্র, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:৩০ অপরাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০২১
হুমায়রা নাজিব নদী ।।
´ভালো থাকা´বিষয়টা সাইকোলজিকাল ইমোশনের সাথে সম্পর্ক থাকায় এই ব্যাপারটা ভিষন ভাবে আপেক্ষিক।যার অর্থ বা অনুভূতি একেকজনের কাছে একেকরকম।কারোর কাছে ভালো থাকা মানে ল্যাভিস লাইফ, কারো কাছে দুবেলা দুমুঠো খাবারের নিশ্চয়তা, কারোর কাছে সুস্থতা বা বিশেষ কারোর সান্নিধ্য।তাই ভালো থাকার বিশেষ কোনো ডেফিনেশন দেয়া না গেলেও অল ওভার ভালো থাকা বলতে বোঝানো যায় মনের শান্তি। সুস্থ জীবন যাপনের জন্য এই মানসিক শান্তির কোনো বিকল্প নেই বললেই চলে। কোনো কারন ছাড়াই যদি ভালো না থাকা অনুভূত হয় বা মানসিক শান্তির অভাব বোধ হয়, তবে বুঝতে হবে মনের কোথাও একটা ফার্স্ট্রেশান বা হতাশা কাজ করছে।
বর্তমানে অনেক নারীদের মাঝেই ফার্স্ট্রেশান ব্যাপারটা কমন। হয়তো অতীতেও ফার্স্ট্রেশানের উপস্থিতি একই হারে ছিলো, কিন্তু বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্যকে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়, অতীতকালে সে ভাবে ব্যাপার গুলো প্রাধান্য পেতোনা বা মনের অগোচরেই ব্যাপারটা সুপ্তাবস্থায় রয়ে যেতো। যার ফলে তখন ব্যাপার গুলো ক্লিনিকাল স্টেজে চলে যেতো, যার পরিনাম হতো ভয়াবহ।কিন্তু বর্তমানে নারীরা নিজেদের শারীরিক কিংবা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেকটাই সচেতন। নিজেদের ভালো রাখতে তারা সার্বজনীনভাবে সচেস্ট এবং তৎপর।আর ফার্স্ট্রেশান দুর করতে বর্তমানে চিকিৎসাশাস্ত্রেও নানান রকম উপায় বিদ্যমান। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাউন্সিলিং।ফার্স্ট্রেশান দূর করতে কাউন্সিলিং যথেস্ট সহায়ক ভূমিকা রাখে।এছাড়া এক্সট্রিম পর্যায়ে গেলে মেডিকেশানেরও ব্যাবস্থা রয়েছে। তাই বর্তমানে মেডিকেল সাইন্স অনুযায়ী নারীদের এই ফার্স্ট্রেশান নামের নরক থেকে বেড়িয়ে আসার উপায়ও রয়েছে।সবচেয়ে ভালো অপশন সেল্ফ কাউন্সিলিং, অর্থাত নিজেকে নিজে বোঝানো।এই সেল্ফ কাউন্সিলিং এর সহায়ক পার্ট হিসেবে আমরা আনুসাঙ্গিক কিছু কাজ করতে পারি যা ভালো থাকতে সহায়তা দিবে বা নিজেকে ভালো রাখবে।যেমনঃ
নিজের খেয়াল রাখুন, মেডিটেশান করুনঃ
ফার্স্ট্রেশান থেকে বেরিয়ে আসার অন্যতম ইফেক্টিভ পথ হচ্ছে নিজের খেয়াল রাখা। অর্থাৎ নিজেকে ভালোবাসতে হবে। শরীরের যত্নের পাশাপাশি যথাসম্ভব নিজেকে প্রেজেন্টেবল রাখতে হবে।নারী নিজেকে সুন্দর আবয়বে দেখতে ভালোবাসে। তাই নিজেকে সুন্দর ও পরিপাটি রাখাটা জরুরি।ভেতর থেকে ডাউন ফিল করলে মেডিটেশান করতে পারেন।কখনো কখনো হতাশা দূর করতে মেডিটেশান ভালো ফল দেয়।
নিজের লালিত সপ্নের প্রতি যত্নশীল হোনঃ
আবদুল্লাহ আবু সাঈদ স্যারের একটা বিখ্যাত কোট আছে, “মানুষ তাঁর সপ্নের সমান বড়”; প্রতিটা মানুষের সপ্ন দেখার অধিকার রয়েছে জীবনে। সপ্নহীন জীবন মৃত্যুর সমকক্ষ। সপ্ন পুরনের অভাব থেকে ফার্স্ট্রেশান আসতে পারে। তাই নিজের ভেতর লালন করা সপ্ন বিসর্জন দিলে চলবেনা। সপ্ন পুরনের প্রতি সচেস্ট হতে হবে।একজন নারী সংসার ধর্ম পালন করতে যেয়ে বেশিরভাগ সময়েই নিজের সপ্নের জলান্জলি দেয়। বাকিটা জীবন হতাশাপূর্ণ হাহাকার নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়।তাই সপ্ন পুরনে নিজেকে ব্যাস্ত রেখে ফার্স্ট্রেশান দূর করা সম্ভব।
ছোট ছোট ইচ্ছে পুরণঃ
ছোট ছোট ইচ্ছের বহিপ্রকাশ নারীর সহজাত প্রবৃত্তি।মানুষের ভেতরকার ছোট ছোট ইচ্ছের মৃত্যু হলে তাঁর মনের মৃত্যু ঘটে। আর মৃত মন মানেই জীবন্ত লাশ। জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকাটা নরক যন্ত্রনার চেয়েও ভয়ংকর।তাই নিজের ছোট ছোট ইচ্ছে গুলোর প্রাধান্য দিন।যা ভালো লাগে করুন। বই পড়ায় আগ্রহ থাকলে বই পড়ুন, মুভি দেখার শখ থাকলে দেখুন।বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগলে মাসে এক দুবার কিটি পার্টির এ্যারেজমেন্ট করতে পারেন।সাজতে ভালো লাগলে সাজুন, শপিং করুন; ভ্রমনের নেশা থাকলে বিভিন্ন জায়গায় হলিডে কাটিয়ে আসুন।শুধু একটা ব্যাপার মাথায় রাখবেন। নিজের এই প্রজাপতির মতোন ফুরফুরে ইচ্ছে গুলোকে হত্যা করবেন না। নিজের মনটাকে বাঁচিয়ে রাখুন, মরে যেতে দিবেন না।
নিজেকে জানুন, আত্নবিশ্বাস বাড়ানঃ
সফলতার সাথে কাজ করে যে আত্নবিশ্বাস নিজের ভেতরে তৈরী হয়, তা ফার্স্ট্রেশান দূর করতে বহুলাংশে সফল। আর এই সফলতা অর্জনের জন্য নিজের রেন্জ জানা প্রয়োজন। আমাকে দিয়ে কতটুকু সম্ভব, কতদুর আমি যেতে পারবো সেটা ভালোভাবে জানাটা জরুরি। আনরিয়েলিস্টিক গোল মানুষের ভেতরকার আত্নবিশ্বাস ভেঙ্গে কেবল হতাশার সাগরেই ডুবিয়ে দিবে। তাই নিজের যোগ্যতা বা স্কিল অনুযায়ী লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে আত্নবিশ্বাসী হওয়া জরুরি।আত্নবিশ্বাসই সকল আনন্দের উৎস।
নিজের জগত তৈরী করুনঃ
একজন নারী তাঁর সমস্ত সময় ব্যায় করে পরিবারের পেছনে। সংসার ধর্ম পালন করতে যেয়ে ভুলে বসে দিনশেষে সেও একজন মানুষ। তাঁরও নিজের মতো করে কিছুটা সময় কাটানোর অধিকার আছে।তাই সংসারের শত ব্যাস্ততার মাঝেও কিছুটা সময় বেছে নিন একেবারেই নিজের জন্য।ওই সময়টা হতে পারে সপ্তাহে দুদিন বা তিনদিন। নিজেকে চর্চা করুন ওই সময়টাতে। আপনেও একজন মানুষ, আপনার ভেতরেও সৃস্টিশীল কিছু গুন আছে। ওই গুনগুলোর চর্চা করুন। নিজের মেধাকে কাজে লাগান ওই সময়ে। অনেক মেধাবী নারী সংসারে সময় দিতে যেয়ে নিজের মেধাকে অবমুল্যায়ন করে। যার ফলে নিজের ভেতরে একটা ফার্স্ট্রেশান তৈরী হতে পারে।
নেগেটিভিটি এড়িয়ে চলুনঃ
চলার পথে আমাদের অনেক মানুষের সাথেই পরিচয় ঘটে। তাদেরকেই নিজের সার্কেলে স্থান দিন, যারা আপনার মানসিক সাস্থ্যের জন্য ভালো। যারা আপনার ভালো কাজে ইন্সপাইরেশনাল ভুমিকা রাখে।তাদেরকে চিনে রাখেন যারা অসুস্থ প্রতিযোগিতা বশে আপনাকে ডাউন দেয়ার চেষ্টা করে।এদের সাথে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলুন। মনে রাখবেন, আপনার প্রকৃত বন্ধু আপনার যেকোনো অর্জনে প্রাউড ফিল করবে, জেলাসি নয়।তাই এসব ইনসিকিউর নেগেটিভ পাবলিকের সাথে হাসিমুখে কথা বললেও এদেরকে বন্ধু ভাবার দরকার নেই।
অন্যের সাথে তুলনা বা প্রতিযোগিতা ছাড়ুনঃ
মনে রাখবেন, আপনে আপনেই। চাইলেই আপনে আরেকজনের মতো হতে পারবেন না। তাই অন্যকে নকল না করে নিজের মতো করে শক্ত অবস্থান তৈরী করুন। ভালো ভালো সৃস্টিশীল কাজে নিজের ইনভল্ভেন্স বাড়ান। নিজের এমন পার্সোনালিটি তৈরী করুন যেনো অন্যরা আপনাকে আইডল হিসেবে অনুকরন করে, এমনকি যারা ইনসিকিউরিটি বশত আপনাকে পছন্দ করেনা, তারাও আপনাকে নিয়মিত ফলো করে;
শেষ কথাঃ
চাণক্যের মতে একজন নারী একজন পুরুষ থেকে মানসিক ভাবে বহুগুনে শক্তিধর। তাই চিরকাল শাস্ত্রে শক্তির উৎস হিসেবে নারীই বন্দনা পেয়েছে। একজন নারী চাইলে তাঁর মেন্টাল শেপ নিজের মতো করে নিয়ে ভালো থাকতে পারে। চাই কেবল নিষ্ঠা, একাগ্রতা।আর এই একাগ্রতার গভীরে প্রবেশের জন্য প্রয়োজন নিজেকে সময় দেয়া, নিজের কথা ভাবা।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | |||
5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 |
12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 |
19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 |
26 | 27 | 28 | 29 | 30 |
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
Associate Editor: Humayra Najib Nodee
Begum24 registered in England and Wales, Company registration Number 12687984. This is the oldest women monthly magazine, is currently online and monthly print limited edition.